25 Nov 2024, 08:28 am

রক্তাক্ত জনপদ ঝিনাইদহের শৈলকুপা ; দেড় দশকে ১১৬ জন খুন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

এম কবীর, ঝিনাইদহ : টেন্ডারবাজী,সামাজি কোন্দল, রাজনৈতিক বিরোধ,লুটপাট এবং এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিগত আওয়ামী শাসনামলে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় খুন হয়েছেন অন্তত ১১৬ ব্যক্তি। এসব হত্যাকান্ডে আসামি করা হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী ছাড়াও  বহু নিরপরাধ মানুষকে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের রোষানলে পড়ে পথে বসেছে অনেক পরিবার। অনেকে বাপ-দাদার পৈতৃক ভিটা ছেড়ে চলে গেছে অন্য এলাকায়। দখল হয়েছে ক্ষেত- ফসল,ভিটে মাটি,গরু-ছাগল। অনাবাদী রয়ে গেছে শত শত বিঘা ফসলী জমি। চিরতরে পঙ্গু হয়ে হাসপাতালে আছে অনেকে। এমনকি অনেক নিহতের পরিবারকেও এলাকা ছাড়তে হয়েছে। হত্যাকারীরা তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছত্র-ছায়ায় অবাধে করেছে এসব অপরাধ। থানা-পুলিশ আইন আদালাত থেকেছে নির্বিকার।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ থেকে ২০১০ সালে শৈলকুপায় সতেরটি হত্যাকান্ড ঘটে। ২০১১ সালে নয়টি, ২০১২ সালে আটটি, ২০১৩ সালে নয়টি, ২০১৪ সালে সতেরটি, ২০১৬ সালে আটটি, ২০১৭ সালে সাতটি, ২০১৮ সালে সাতটি, ২০১৯ সালে পাঁচটি, ২০২০ সালে আটটি, ২০২১ সালে ছয়টি, ২০২২ সালে সাতটি, ২০২৩ সালে ছয়টি ও চলতি বছর দুইজন হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন।

দেড় দশকে শৈলকুপার আলোচিত হত্যাকান্ডের মধ্যে রয়েছে চলতি বছরের ২৪ জুলাই কাশীনাথপুর গ্রামের কলেজছাত্র রানা মন্ডল হত্যা, ২০২৩ সালের ২৪ অক্টোবর ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান রিপন হত্যা, ২০২২ সালের ৮ জানুুয়ারি বগুড়া গ্রামের কল্লোল হত্যা, ৫ জানুয়ারি কৃত্তিনগর গ্রামের অখিল কুমার হত্যা, ৩১ জুলাই পুরাতন বাখরবা গ্রামের জানিক হত্যা, ২০২১ সালের ২৫ জুলাই দামুকদিয়া গ্রামের উকিল মৃধা হত্যা, ১০ নভেম্বর যুগিপাড়া গ্রামের মিজানুর হত্যা ও একই বছরের ১৭ এপ্রিল রতন মন্ডল হত্যা, ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর ভাটবাড়িয়া গ্রামের সুফিয়া বেগম হত্যা ও বৃত্তিপাড়া গ্রামের মোখলেসুর রহমান পাইলট হত্যা, একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর চররূপদাহ গ্রামের রিপন হত্যা, ২০১৯ সালের ৪ আগস্ট পাইকপাড়া গ্রামের পরিজান নেছা হত্যা, ২০১৭ সালের ২৯ জুন বড়দাহ গ্রামের মনিরুদ্দীন হত্যা, ২০১৬ সালের ১৫ জানুয়ারি কবিরপুর এলাকায় শাহিনুর হত্যা, ২০১৩ সালের ১১ জুলাই সাধুখালী গ্রামের ফরেজ আলী হত্যা, ২০১২ সালের ১৩ অক্টোবর চড়িয়ারবিল বাজারের মাসুদ হত্যা, একই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর ফুলহরি গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ইদ্রিস হত্যা, ভাটইবাজারে সার ডিলার আব্দুল লতিফ হত্যা ও ২০১০ সালের ৩১ সেপ্টেম্বর লক্ষণদিয়া গ্রামের আবুল হাসেম হত্যা।

এ বিষয়ে শৈলকুপা উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ ১৬ বছর আমাদের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে আওয়ামী লীগের কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। ফলে রক্তাক্ত জনপদে পরিণত হয়েছিল শৈলকুপা। আমরা দলীয় নেতাকর্মীসহ স্থানীয় সামাজিক মাতবরদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি। খুব দ্রুত এলাকায় শান্তি ফিরে আসবে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর জেলা কমিটির সভাপতি আমিনুর রহমান টুকু বলেন, ‘বিচারহীনতার কারণে শৈলকুপায় একের পর এক নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটেছে। এসব হত্যার শিকার পরিবার ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এর দায় এড়াতে পারেন না।’

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া বলেন, ‘শৈলকুপার সামাজিক কোন্দল নিরসনে আমরা কাজ করছি। ফলে গত দুই বছরে হত্যাকান্ড কম ঘটেছে। আশা করছি, খুব দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 14846
  • Total Visits: 1302533
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২২শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ৮:২৮

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018